Saturday, February 26, 2011

ওরে অভাগা ভ্যা-ভ্যালেন্টাইন ডে......

ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভালো না।
ইন ফ্যাক্ট খারাপ। আরো স্পেসিফিক করে বললে বিব্রতকর (ইয়া আল্লাহ, কী মনে করতে বসলাম! #:-S )
যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি,

বেড়াতে গেলাম খালার বাসায়। খালা তখন থাকত ফেনীতে। ভালো কথা। তারা আমাদের আগমন উপলক্ষে বন্ধুর বাড়ি ঘুরতে যাবে তাও আমাদেরকে সাথে নিয়ে। আমাদের বলতে আমি আর আমার খালা।
আমি পড়িলাম অস্বস্তিতে। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধবী মহলে আমাকে ডাকাও লাগে না, না ডাকতেই দুনিয়ার বকর বকর বাক বাকুম করিB-):D
কিন্তু অপরিচিতদের মধ্যে পড়লে:-/ "ত্রাহি মাইসেলফ" দশা শুরু হয়ে যায়।
মুখে স্ট্যাপলার লেগে যায়। চুপ করে এককোণায় বসে থাকি। ইহাকে কী ইন্ট্রোভার্ট হওয়া বলে কিনা জানি না। তবে আমার এই অভ্যাস এখনো অল্প-স্বল্প আছে।

যাহোক, আমি সরাসরি বলতেও পারি না যে আমি তাদের বন্ধুর বাড়ি যেতে চাই না। বললে জিজ্ঞেস করবে -কেন?
তখন আমি সত্যি কথা বলতে পারব না। তাহলে পচানী খাব। বলবে ঘরের মধ্যে এত "ঝগড়াটি" (খালা আমাকে এই নাম দিয়েছিলেন অতি শিশুকালে) আর বাইরে গেলে কী হয়!
পচানী খাব না। সুতরাং চুপ চাপ রেডি হইলাম।
বাহিরে আসিয়া আরো বিপদ। আমার দুই খালা উঠল রিকশায় পিচ্চিকে নিয়ে। আর খালুজান বলে আমাকে তাহার সাথে বাইকে করে যেতে।
আমি বাইকের দিকে একটি করুণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলাম। উনি কী বুঝলেন কে জানে, বললেন কিছু হবে না। বসে পড়। আমি অতি অনভ্যস্তভাবে বসলাম সেই পুলসিরাতের উপর। আমি চাইসিলাম দুই পা দুই দিকে দিয়ে বসব। কিন্তু তাহা সম্ভব হইল না, কারণ আমি স্কার্ট পরেছিলাম:|
যাহোক ভয়ে ভয়ে বসলাম। বাইক স্টার্ট নেয়া মাত্রই আমার আত্মারাম খাঁচার মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। ইয়ে কেয়া হ্যায় খোদা!
আমি শক্ত হয়ে বসে রইলাম। খালু বলল, আমার কাঁধ ধরে বস।
কিন্তু আমি তাহা করিলাম না। তাহার কাছে আমি পিচ্চি হইলেও আমার কাছে আমি নিতান্ত পিচ্চি ছিলাম। কী আজিব সা কথাবার্তা! আমি ক্যাপিটাল কে দিয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ি! আমি উনার কাঁধ ধরব! এহ! আর বেল্ট!!! ওহ out of question!
আমি কনফিডেন্ট ভঙ্গিতে বাইকের একপাশ ধরিয়া বসিয়া বলিলাম, না দরকার নাই।
কিন্তু দরকার ছিল।
প্রতিটি টার্ন এবং অ্যাবাউট টার্নের সময় আমি হেলিয়া দুলিয়া পড়ি পড়ি করিয়া কোনমতে (সত্যিকার অর্থেই কোনমতে) বসে থাকলাম।:((:((
সে কী ভয়াবহ অবস্থা!
আর বলার দরকার তো নিশ্চয়ই নাই যে আমার হৃদয় মোবারক তখন লাফাইয়া আমার গলার কাছে উঠিয়া আসিয়াছিল।
:((:((
যাই হোক, ট্রাফিক জ্যাম এক আশীর্বাদ। তাহার আগমনে আমি ঠিক হইয়া বসিলাম।
এরপর মোটামুটি চললাম। ভয়টাও অল্প স্বল্প কেটে গেল। ব্যালান্স রাখার সিস্টেমটা মোটামুটি বুঝে গেলাম; মানে ভাবলাম যে বুঝে গেছি।
এই সময় আমি পথের দিকে একটু একটু মন দেয়া শুরু করলাম। মফস্বল শহরের চিরকালীন যে চার্ম তাহা উপভোগ শুরু করে দিলাম।
খালু বলল, প্রায় চলেই আসছি।
ওহ ভালো কথা- মনে মনে ভাবলাম। আফটার অল আমার পেন্ডুলামীয় গতি তো শেষের দিতে আসছে। তবে একটু একটু মন খারাপ হইল কারণ আশেপাশে কতগুলো ইয়াং ছেলে পেলে দেখা যাইতেছিল, সবাই যে খুব সুভদ্র গোছের তা না। তবে বিয়াদ্দপ টাইপও না। তাহাদের দিকে তাকিয়ে আমি একটু ভাব ধরে থাকলাম যেন তাদের পিছনের ব্যাক গ্রাউন্ড দেখতেসি। :P
বাইকের মন্দ গতির কারণে আমি হাওয়ায় আমার চুলের উড়াউড়ি দেখিতেছ..........
বাহ বেশ!
এমন স-ম-য়.....
ঠিক আমাদের ডেস্টিনেশনের দুই তিন গজ দূরে একটি ড্রেনের ঢাকনার উপর বাইকটা আরামসে যখন উঠে গেল আমি তখন বাইক থেকে আরামসে নিচে পড়ে গেলাম।
আইনস্টাইনের সূত্র মোতাবেক টাইম রিলেটিভ হইয়া আসিল। সময় পিক্সেলেট হয়ে গেল। পিছনে হাসির শব্দ শুনিয়া বুঝিলাম পোলাগুলা বেয়াদ্দব। কিংবা তাদের সেন্স অব হিউমার আছে।
আমার খালু মশাই তাড়াতাড়ি এল আমাকে উঠাতে। আরে মিয়া তখন আর উঠায় কি লাভ! :((:((:((:((
আর দিনটি ছিল -
ভ্যালেন্টাইন ডে'র আগের দিন।
অর্থাৎ কিনা ভ্যালেন্টাইন ডে আমার কাটিল মাজা ব্যথা এবং মন ব্যথাকে চেক দিতে দিতে......

.....................................

এই তো গেল অতীতের কথা।
আর বর্তমান?
নাহ আগে নিকট অতীতের কথা বলি।
বলার কিছু নাই।
আমার জীবনে পেড়েম ঘটে নাই। সুতরাং ভ্যালেন্টাইন ডে'তে আমার আঙ্গুর ফল টক লাগে।

আর এই বছর?
গতকাল সারাদিন ঢাকা ভার্সিটি ক্যাম্পাসে, ঘোরাঘুরি করি আর পাবলিকের মজা দেখি। বাসে ওঠার পর স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা। সে জিগায়, কি রে তোমার ফাল্গুনী ড্রেস কই?
আমি বলি আমার বসন্ত টসন্ত নাই :(
গতকাল সারাদিন ঘুরে আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গল্প করে এমনই গলা ভেঙেছে যে আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে'তে আমি ফিস ফিস করতেছি।
লাইব্রেরিতে আসার পথে একটি লাল্টু সুন্দর টাইপ দেখতে সিনিয়র ভাই দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করে। আমি উত্তর দেই। কিন্তু উনি শুনতে পান না। মাঝে মধ্যে পুরুষকন্ঠের মত সাউন্ড বের হয়
X(/:):((
তাড়াতাড়ি মাথা নেড়ে কথা সারতে।
লাইব্রেরিয়ান ভাই শুনে বলতেসে, গলা ভাঙসে ভালো হইসে। নাহোলে সারাদিন মোবাইলে.... বলে উনি অভিনয করে দেখান মেয়েরা কেমনে গল্প করে।
আমি উত্তরে বলিলাম, না ভাইয়া আমার 'ঐসব' নাই।
আসলেও 'ঐসব' নাই।
কিন্তু থাকিলে ভালোই হইত।
........................
শেষকথা:
যাহাতের ঐসব আছে এবং যাহাদের নাই উভয়কেই আমার শুভ কামনা থাকল।
আমি এখন উঠি গা।
আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক। আর যারা প্রেম করে তাদের মুখে ফুল-চন্দন (ছাই) পড়ুক।

7 comments:

  1. LOL. nice to see you back. :)

    ReplyDelete
  2. এতোদিন পর!!

    যাইহোক, অনেক দিন পর উৎকৃষ্ট বিনোদনে বিনোদিত হইলাম ;)
    খেক খেক...............

    ReplyDelete
  3. L,
    it's good to see you too.
    ei to gelo formal kotha,,,,
    informal holo asha kori tumio hashchho.
    hashanor jonnoi eita likhsi :)) he he,,, ses porjonto nijeke niye joke kori.. sob che nirapod, keo mind korbe na. ki bolo?

    Ibn shahid,
    mia khali haisho na... dat o maijo (dhar kora kotha diya dilam he he)
    :( ete binodner ki ase? tomar sovab to valo na, ekta manush pore gele dekhe haste ase? ei gula ishcool a shekho nai?

    ReplyDelete
  4. এইসব তো স্কুল থেকে শিখি নাই!! আপনের কাছ থেকে শিখসি ;)

    কেহ পড়িয়া গেল
    তুমি হাসিয়া ফেল ;)

    ReplyDelete
  5. nah... tomar to dekhtesi sense nai.... ami murubbi manush ijjot koira cholba... ar kichhu koilam na ekhonkar moton.

    ReplyDelete
  6. এই লেখাটা জেনুইন হাসির খোরাক:)

    ReplyDelete
  7. পরের দু:খে হাসতে নাই রে পাগলা!

    ReplyDelete

What do you think?