Thursday, December 22, 2011

অক্টোবরের ডায়রি

[ বহুদিন আগের লেখা এইটা। ২০০৯ এর অক্টোবরে। সামহয়্যারইন ব্লগে আমার ড্রাফট সেকশনটাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে গিয়ে বের হল লেখাটা। মনে পড়ে একবার পাবলিশ করেছিলাম লেখাটা... পরে আবার ড্রাফট করে ফেলেছিলাম।

আব্দুল মান্নান সৈয়দ নাকি একবার বলেছিলেন, যে লেখাটা একবার লেখা হয়ে গেছে, সেটা হল একটা বাচ্চার মত। ভালো হোক, মন্দ হোক; এখন তার যত্ন করতে হবে।

এই লেখাটা আজকে ড্রাফট থেকে বের করার পিছনে এই চিন্তাটাও একটা ইনফ্লুয়েন্স।




আরেকবার চোখ বুলালাম। প্রথম কথাটা সত্য হয়েছে এতদিনে। 'শোক মন্দীভূত' হয়েছে। মানে... হয়ত হয়েছে। ঠিক ঠাক জানি না। দৃশ্যত মনে হচ্ছে লেখাটা এখন আমার ব্লগে টাঙানো থাকলেও আমি খুব একটা অস্বস্তিতে পড়ব না। যখন লিখেছিলাম তখন এই অবস্থাটা ছিল না। আর্দ্র মন থেকে যে লেখা আসে সেটা খুব স্পর্শকাতর হয়।

এখন হয়ত খরাকাল চলছে। তাই পোস্ট করে ফেললাম। থাকুক নাহয় আমার ব্লগেই লেখাটা।

একটা কথা আমি সারা জীবন মেনে এসেছি-

কালকের অনুভূতি আজকের আলোয় খুব ঠুনকো মনে হতে পারে.....

কিন্তু কালকের অনুভূতি কালকের জন্য সত্য।

যেহেতু কাল সত্য ছিল।

আজও সত্য।

কিছুটা হলেও সত্য। ]


............................................


[শোক মন্দীভূত হইলে লেখা প্রকাশ হইবে। আজ কত তারিখ দেখিয়া লই... উমম অক্টোপাস ২১। ভালো। বছরের দশম মাস। এতদিন দুনিয়ায় থাকিয়া করলামডা কি? আল্লাহ মালুম! ইয়া আল্লাহ দুনিয়ায় বেহুদা আয়ু দিও না, কোন কাম করাইবার মতলব থাকলে তাড়াতাড়ি ইস্টার্ট দ্যাও, না থাকলে উঠায় নিয়া যাও। কামের মধ্যে তো নিত্যদিন পাপ কামাই ছাড়া আর কিছুই হইতেসে না। কি আর কমু, তুমিই ভালো বোঝো, এখন কি করবা?]

..........................................................................................


আজকের লেখা বড়ই র' ভাষায় লেখতে মন চাইতেসে। দুঃখের কতা অত ইস্টাইল কইরা কইতে মন চায় না। মনের কতা অইবে মনের ভাষায়। সাদা বাংলায়। সাদা বাংলা অবশ্যি কঠিন আচে। এতো সোজা না......
কাহিনী ঘটসে কাইলকা। বান্ধবীরে নিয়া ঢাকা ভার্সিটি গেসিলাম (মরতে গেসিলাম কোন দুঃখে আল্লাহই জানে)। গিয়া মনডি হেভি খারাপ হইছে...... হেভভি খারাপ...... বলার মত না..........

এত মন খারাপ ইমোটিকন দিয়েও বোঝানো যায় না। ইহা বড়ই দুষ্ক।

এতদিন ঢাকা ভার্সিটি গেসি, কোনদিন চারুকলায় ঢুকি নাই। দিল্লী কা লাড্ডু খাইসিলাম না দেইখা কোনদিন টেরও পাই নাই যে কি বাজে জিনিস মিস করছি এতদিন। ঐদিন কি তালেবরি চাপসিলো খোদা তায়ালা জানে, মাতুব্বরি করে বান্ধবীরে কই ,'চল ঢুকি চারুকলায়।' এতদিন ঢুকসিলাম না বিকজ আমার যেকোন প্রকার নোটিশ বোর্ডের প্রতি মনে মনে অমোঘ শ্রদ্ধা স্ল্যাশ ভীতি রহিয়াছে। চারুকলার একটা গেটে আবার নোটিশ টানানো আছে, পরিচয় ছাড়া ঢোকা নিষেধ। এই লিগা আমি এতদিন গেসে গা তাও ঢুকি নাই। কাইলকা বান্ধবীরে বীরত্ব দেখাইতে ঢুকলাম....

সত্যি মনের মধ্যে একটা গোপন দরজা খুলে গেল। একটা গোপন প্রকোষ্ঠ। একটা সুড়ঙ্গ। এতদিন কই চাপা পড়ে ছিল ব্যস্ততার নিচে!

গতকাল ফেরার পর থেকে চোখ বুঁজলে খালি কয়েকটা জিনিস দেখতে পাচ্ছি, কয়েকটা দৃশ্য........

একটা ছেলে আপন মনে ইজেলে তুলি বোলাচ্ছে...... ছবিটা চমৎকার। কি যেন এঁকেছে সে, একটা করিডোর, দূর থেকে তেমনই দেখাল, আর আশপাশে সবুজ মনে হচ্ছে রাস্তাটা অনেক দূর চলে গেছে..... তাকিয়ে থাকতে থাকতে ইচ্ছে হয় পথটা ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই বহুদূর........

আরেকটা ছেলে প্রায় নিজের শরীরের অর্ধেক দৈর্ঘ্যের ইজেল টেনে নিয়ে হেঁটে আসছে একটা বারান্দা ধরে.....
একটা ছেলে আর দু'চারটা মেয়ে দেখলাম সিঁড়ি ধরে নেমে আসছে, ছেলেটার হাতে গোল সাদা ট্র্রে তে লাল নীল রং আলো পড়ে ঝলসে উঠছে......

একটা বসার বেঞ্চ, গাছের গুড়ি কেটে বানানো.... এক ধারে একটা মেয়ে বসে স্কেচ করছে......
নিবিড় একটা পরিবেশ... মনে হয় হাতছানি দিয়ে ডাকছে....... আমি তো ওদেরই একজন হতে পারতাম.....

আমি তো হতে চেয়েওছিলাম......

কিন্তু হল না।

জীবনটা অন্য পথ ধরে হাঁটা শুরু করেছে।

যেখানে শান্ত কোন পরিবেশ নেই, যেখানে চোখ বুঁজে শ্বাস টানলে মনে হয় না
I belong here.... I belong here....

জীবনটা অন্য একটা পথ ধরেছে... যে পথে প্রখর উত্তাপ, যে পথ ভীষণ বাস্তববাদিতার পথ.... যেখানে শান্তি, স্বস্তি এসবের জায়গা নেই। স্থান নেই।

মাঝে মাঝে অচেনাকে প্রশ্ন করি,
what makes life so complicated?
উত্তর পাই না.....
উত্তর পাব কি করে?
উত্তর তো নাই-ই।
একটা পসিবল উত্তর ইদানীং মাথায় আসে,
May be life is complicated itself.
এটাও সঠিক উত্তর কিনা জানি না, জানা হয় নাই কোনদিন। জীবনটা এমন জটিল, কারো লাইফ ঘোরে ভালবাসাকে কেন্দ্র করে, কারোটা ঘোরে না পাওয়াকে কেন্দ্র করে, কারো জীবন ঘোরে ব্যস্ততার চাকায় চক্কর কেটে..........
কার জীবনে পূর্ণতা আছে, প্রাপ্তি আছে?
এমন কি কেউ আছে যে জীবনের একটা পর্যায়ে এসে বলেছে, I am happy?
................................

কেমন যেন সব কিছু উল্টা পাল্টা লাগে।

এলোমেলো।

মনে হয় ঐ জায়গাটা আরেকটু অন্য রকমও হতে পারত বা ঐ কাজটা অমনও করতে পারতাম। কেন যে মনে হয়!
আবার এই কথা গুলোও কি এখানে লেখার কথা আমার?

এগুলো তো একান্ত ব্যক্তিগত সুখ দুঃখের কথা, এখানে তো কোন মন্তব্য, কোন রেটিং চলে না। তাও লিখছি।
যা করা হয়নি তার জন্যই মানুষের আফসোস বেশি হয়........ হয়ত ভুলে যাব একদিন, ব্যস্ত হয়ে যাব, আর এসব কথা মনে হবে না। আর মনের কোণায় ছোট ছোট না পাওয়ার মেঘ উড়ে বেড়াবে না। বয়সের সাথে সাথে মানুষ কম্প্রোমাইজ করতে শেখে। স্বপ্নের সাথে কম্প্রোমাইজ, বাস্তবতার সাথে কম্প্রোমাইজ....
জীবনের সাথে কম্প্রোমাইজ।
শুধু মাঝে মাঝে বিষণ্ণ মন চারুকলার আশপাশে ঘুরে বেড়াবে...........
যেখানে একটা ছেলে আপনমনে ইজেলে তুলি টানে, একটা ছেলের হাতের রংয়ের প্লেটে লাল নীল রং ঝলসে ওঠে........
যেখানে মনে মনে গাছের গুঁড়ির বেঞ্চে বসে উদাস দুপুর পেরিয়ে যায়.........
যেখানে স্বপ্নের ইতি.................


.... অক্টোবর ২১, ২০০৯

6 comments:

  1. ছবিটা সুন্দর। আপনার আঁকা?

    ReplyDelete
  2. উঁহু... না। নেট থেকে ডাউনলোড করা।
    ....
    অফ টপিক, কী খবর তোমার?

    ReplyDelete
  3. শোক মন্দীভূত হইয়াছে জানিয়া ভালো লাগিলো। অতঃপর বুঝিতে পারিলাম ইজেল দিয়ে ক্রমাগত আঁচড়ে এঁকে যাওয়ার ব্যাপারটার মাঝে আপনার নিরতিশয় ভালোলাগা কাজ করে। এই মুগ্ধ হওয়া হইতে তাহার প্রতি বাড়াবাড়ি রকমের একখানি আবেগও কাজ করিয়া থাকে। উহাতেই সময় সময় একচক্ষু দর্শনের সৃষ্টি হইয়া থাকিবে.... এই বিষয়ে খোদাই উত্তম জ্ঞানী :)

    ছবিখানা সুন্দর। পুরোনো লেখার পূর্বে রচিত আজকের প্রস্তাবনা অংশে হুমায়ূনীয় লেখ্যরূপের ব্যাপক প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। অবশ্যি এই ঢংটা মোহনীয় ও আকর্ষণীয়। পাঠকগণ সহজেই পড়িয়া ফেলিতে পারেন। উহা ভালো জিনিস নিঃসন্দেহে

    ReplyDelete
  4. ইয়া আল্লাহ!
    এত বহুমুখী খোঁটা দিলে তো বিপদ।

    ১.বাড়াবাড়ি রকম আবেগ কিনা জানি না। হয়ত আবেগ মাত্রই বাড়াবাড়ি। তবে যুক্তি দেয়া,বোঝা এবং আদায় করার ক্ষমতা আমার আছে।
    দর্শন কোনটা যে একচক্ষু... থাক... পুরান আলাপ :-|

    ২.হাঁ, ছবিটা আমার খুব পছন্দ। আর্টিস্ট অজ্ঞাত যদিও।

    ৩. হুমায়ূনীয় প্রভাব টের পাচ্ছেন জেনে শঙ্কিত হলাম। যদি হয়েও থাকে অবশ্যই অনিচ্ছাকৃত।
    তবে একটা ব্যাখ্যা হতে পারে হয়ত অনুভূতিটাই 'হুমায়ূনীয়' ছিল, এজন্য প্রকাশটাও অমন হয়ে গেছে আপনা থেকেই।
    কনশাসলি হুমায়ুনীয় ঢং করি নাই। কারণ কনশাসলি হুমায়ূন স্টাইল আমার ততটা পছন্দ না। বেশি সহজে যে লেখা গেলা যায় সেটা অনেকসময় একটু বেশি আটপৌরে হয়ে যায়।

    .............
    বাই দ্য ওয়ে, মন্তব্য ভালো লাগল।

    ReplyDelete

What do you think?