Friday, June 17, 2011

"অদ্ভুত হাওয়ার রাত ......."


এত বাতাস বইছে যে আমার হ্যান্ডমেইড উইন্ডচাইমটাও টুং টাং বাজছে।
সম্ভবত আমার ক্রাফটসম্যানশিপে ত্রুটি, অল্প বাতাসে সহজে বাজে না...

গান শুনছি Poets of The Fall এর Sleep আর শুনছি একটা ইন্সট্রুমেন্টাল বিটোভেনের Moonlight Sonata.... এটা নাকি তার ফার্স্ট লাভকে স্মরণ করে কম্পোজ করা.... মারাত্মক।

বাতাসে পর্দা উড়তে দেখে জীবনানন্দের সেই কবিতাটার কথা মনে হচ্ছে,
ঐ যে কী যেন একটা লাইন আছে, "অদ্ভুত হাওয়ার রাত ছিল কাল..."

রাতে খুব বাতাস হলে আমার এই কবিতাটা পড়তে মন চায়, আর কখনোই পড়া হয় না। কেবল ঘুরে ফিরে এই লাইনটাই ঘোরে মাথায়, "অদ্ভুত হাওয়ার রাত ছিল কাল.." তার পরের কথাটা সম্ভবত এরকম যে বাতাসে মশারি উড়ে যেতে চেয়েছে... কিন্তু লাইনটা ঠিক ঠাক মনে পড়ে না। বইটা যখন হাতে নেব তখন আর এই লাইনটা পড়া হবে না ..... নিশ্চয়ই।

অপেক্ষা করছি কখন আম্মু রুটিন 'নাইট ওয়াক' শেষ করে শুতে যাবে। আশেপাশে কেউ থাকলে কেন যেন আমি লিখতে পারি না। তাছাড়া আম্মু বড়আপুর সাথে কথা বলছে, ওয়ান ব্যাংকে কে যেন একজন চাকরি নিয়েছে সেটা নিয়ে কথা। ভাল্লাগছে না.........
পারফেকশান বলে কী কিছু আছে?
যেমন পারফেক্ট মোমেন্ট?
এক্স-ফাইলসে একবার দেখিয়েছিল নায়ক একটা 'পিস আওয়ার' চেয়ে নেয় কোন এক এঞ্জেল এর কাছ থেকে। তারপর রাস্তায় নেমে দেখে সব গাড়ি ঘোড়া থেমে আছে, অফিসের কনফারেন্স রুম ফাঁকা পড়ে আছে....
এখন যদি আমার এরকম একটা উইশ থাকত তো আমি চেয়ে নিতাম 'পারফেক্ট আওয়ার'।
no itching, no anger, no aggravation, no irritation....
রুমটা ফাঁকা হয়ে যেত। বড়আপু পিছনে বসে ফোনে বার্থডে উইশ নিত না। আম্মু এসে কমার্শিয়াল আলাপ কিংবা কোন পলিটিক্যাল নিউজ বলত না, পাশ থেকে মনিটরের দিকে চোখ গোল করে তাকিয়ে থাকত না, আর আমারো বলার ইচ্ছা হত না যে এই কাজটা ইনটলারেবলি ইরিটেটিং, আর তার কথার ক্যাট ক্যাট জবাব দিতে হত না আমাকে, মাঝে মাঝে তর্ক করে জিততেও মন চায় না, খালি মনে হয় যে কথা বাঁধাচ্ছে তার মুখে হাত দিয়ে বলি "পিস মাই ফ্রেন্ড, পিস", এইমাত্র আব্বুকে বলল,'ও কোনদিন কারো কথা শোনে না....' আচ্ছা এটা তো জানা তথ্য, বলতে হবে কেন? আমি জানি, আব্বুও জানে আর আম্মু তো জানেই, কেন আমাকে বিরক্ত করার জন্যই কথাটা বলা? মনে হচ্ছে হাওয়ার রাত কেন বিরক্তির সমস্ত উপকরণ একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে না? বেটার আমাকেই উড়িয়ে নিয়ে যাক..... না তা পারবে কেন? হাওয়ার রাত উড়ায় কেবল জীবনানন্দের মশারি...... সেই মশারি নক্ষত্র পার হয়ে উড়ে যায়- এরকম কিছু একটাই তো ছিল কবিতাটায়...... দূর ছাই ব্যাটা আমার মাথায় RAM কম। একটা কবিতার লাইন তাও মনে পড়ে না.........

একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাচ্ছি, দেখি 'মুনলাইট সোনাটা' পুরোটা ডিস্টারবেন্স ছাড়া একদফা শুনতে পারি কিনা।

পিস আওয়ারের আইডিয়াটা ভালো। আমার মনে হচ্ছে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে ছোটখাট 'পিস' এর ব্যবস্থা করা যায়। যেমন ডোমেস্টিক পিস, নকল পিস, শারীরিক পিস যেমন গরমের দিন বাথটাবে বরফকুচি দিয়ে তার মধ্যে ডুবে মরা যায়, তরমুজ দিয়ে গোসল করা যায়, আম খেতে বসে মাছি তাড়ানোর জন্যও একটা লোক রাখা যায়...... অনেক কিছুই করা যায়.... ছাতা মাথা কী লিখি........

ইন দ্য মিন টাইম, এক্সপেরিমেন্ট ব্যর্থ.......... আম্মু আবার রুমে উঁকি দিয়ে গেল:|। disappointing ব্যাপার! বড়ই disappointing.........
বাহ আমার উইন্ডচাইম বাজতেছে.....
আবার উঁকি.........
X((X((X((X((X((

আজকে মোটেও রাগারাগি চেঁচামেচি করতে মন চাইছে না। সবসময় ফাইট করতে তো মনে হয় নেপোলিয়ানেরও ভালো লাগত না। লাগার কথা না............. তার জীবনেও শোনা যায় প্রেম বলে একটা সাবসিডিয়ারি সাবজেক্ট ছিল....... আমার জীবনে ফাইটিংয়ের পাশাপাশি মাঝে সাঝে ব্লগিং- পেইন্টিং- ফ্যান্টাসাইজিং-মিউজিক-ডায়রি কিপিং এসবেরও একটা ছোটখাট জায়গা রয়েছে। বুড়ো বাবা মা অনেকসময় যেমন বাস্তবতা কিংবা অভাবের ধাক্কায় আস্তে আস্তে আস্তাকুড়ে জায়গা করে নেয় আমার জীবন থেকেও এইসব বিষয়গুলো একটা একটা করে সরে যাচ্ছে। তাদের আর জায়গা নেই। ড্রিমিং তো বহুদিন হল বাদ দিয়ে দিয়েছি, এই জিনিসটা বাস্তবতার সাথে ক্লোজলি রিলেটেড। স্বপ্ন ভাঙলে বাস্তবতার মধ্যে ছিটকে ভাঙা কাঁচের টুকরো ঢুকে পড়ে.... এজন্য স্বপ্ন দেখাকে আমি আজকাল ডেঞ্জারাস জ্ঞান করে ত্যাগ করেছি......

এখন যেভাবে চতুর্দিক থেকে চাপ খাচ্ছি, বাকিগুলোও যাবে............. তাছাড়া এই বিষয়গুলো সব আন-ইম্পর্ট্যান্ট। একটা বাচ্চাও বোঝে শরীরের অসুখটা খুব ডেঞ্জারাস, সাথে সাথে ওষুধ খেতে হবে। বেটার রোগ যাতে না হতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আফটার অল, prevention is better than cure. কিন্তু মনের অ-সুখের কোন মূল্য নাই। মূল্য আছে ভালো রেজাল্ট, ভালো সিজিপিএ, ভালো জব, মোটা পার্স আর সুন্দর চেহারার (মেয়েদের জন্য).........
যাহ, যাহা তাহাই.... মূল্য যখন নাই-ই, কী আর করা। কারো কিছু করার নাই। কয়েকটা তো গেছেই, গিটারে ধুলো জমে গেছে..... ধরার টাইম পাই না। যখন পাই তখন সময়টা রেস্ট নেই। জোর করে তো কিছু করা যায় না। অন্তত এই জিনিসগুলো না। জোর করে পড়া গেলা যায়, ক্ষেত্রবিশেষে খাবারও গেলা যায়, মানুষের অনাকাঙ্খিত কম্পানি সহ্য করা যায়- কিন্তু জোর করে গিটার বাজানো যায় না.............
কী আর করা উনারা এত ডেলিকেট, কেউ একটা ফাউল কথা বললেই আর বাজানোর মুড থাকে না (তারচেয়েও বড় কথা পারি না, প্রোগ্রেস না হলে বাজাতে বিরক্তি লাগে) টানা আধা ঘন্টা স্কেচবুক নিয়ে বসলেই আর ছবি আঁকতে মন চায় না............ কী আর করা!
লেখার অভ্যাসটাও অলমোস্ট চলে গেছে, বাকি যেটুকু আছে চলে গেলে জীবনটা সাদা পৃষ্ঠার মত নিট হয়ে যায়। দেরি নাই, এটাও যাবে। এই যে, এতক্ষণ ধরে বাংলিশে যে জগাখিচুড়ি লিখছি এটা তো বলা চলে কেবল জেদ করেই লিখে চলেছি.... লেখার মুড ছিল প্রথম কয়েকটা প্যারা...... তারপর কই চলে গেছে.....

আর লেখাটাই বা কী এমন জরুরী? এত সুন্দর একটা রাতে যদি ছাদে উঠে বাতাস খাওয়া না যায়, তো রাতটার মাহাত্ম্য থাকে কোথায়? কী-বোর্ড ঠুকে ব্লগ লেখার মধ্যে আদৌ কী কিছু আছে?
(আবার উঁকি......)
আম্মু খুব জ্বালাচ্ছে। আমার না ঘুমানোটা অপরাধ, আর নিজে যে জেগে আছে?

উঁকি বিষয়ক টেক্সটটা কপি করে রাখলাম, যখনই উঁকি দেবে জাস্ট পেস্ট করে দেব, এটা হল ইন্সট্যান্ট স্ট্যাটাস আপডেটB-)
আম্মু খুব জ্বালাচ্ছে। আমার না ঘুমানোটা অপরাধ, আর নিজে যে জেগে আছে?

আর আমার ভাইবোনেরা ব্লগ পড়ে (big inconvenience), তারা পড়ে নির্ঘাত বলবে "এভাবে আম্মুকে নিয়ে লেখা ঠিক হয়নি"। খাঁটি কথা। তবে সত্যি কথা হল আম্মু জ্বালাচ্ছে। অথচ না জ্বালালেও পারতো। আর যেহেতু জ্বালাচ্ছে, সেহেতু আমি জেদ ধরে লিখেই চলেছি....... আর যতবার উঁকি দিচ্ছে নতুন করে ইরিটেটেড হয়ে একেকটা কথা মাথায় আসছে আর সেটা লিখে চলেছি.......
..... স্টিলি নার্ভেরও একটা ব্রেকিং পয়েন্ট থাকে.......

................................................
কী যা-তা লিখলাম, কিন্তু যা-তা তো লিখতে বসেছিলাম না। লিখতে চেয়েছিলাম দুচারটা লাইন। দুটা-পাঁচটা ভাবের কথা। লেখা শেষে উঠে যেতাম।


বড়আপু ঘুমাবে।
উঠে যেতে হবে।
আসলে জীবনে শান্তি বলে কিছু নাই।
জেদ করেও পাওয়া যায় না, যুক্তিতেও পাওয়া যায় না।
ব্যাটা কোথাকার নারায়ণ?
আর ভাল্লাগে না.....
মন চাইছে সারারাত মুন লাইট সোনাটা শুনি আর ছাদে হাঁটি।
বাতাসে সাদা শাড়ির আঁচল পতাকার মত পত পত করে উড়ুক আর মনে মনে কবিতার লাইন উড়ুক, কবিতাকে সিলি মনে না হোক, চাঁদের আলো পড়ে কপালের টিপ চমকে চমকে উঠুক, বেজে উঠুক হাতের চুড়ি আর যদি সম্ভব হয় তো কারো হাতে কারো হাত থাকুক........... এই ইচ্ছেগুলো আমার নিজের জন্য না, অন্যদের জন্য, যারা স্বপ্ন দেখে, এখনো..............
তাদের জন্য আমি উদারমনে দোয়া করলাম, যেন তাদের হয় 'চন্দ্রালোকে মুগ্ধ পদযাত্রা'........
..... আমার হয়নি..............
তাদের হোক...........
তারা স্বপ্ন দেখুক।
আর আমি না দেখি। ঠিক তো করেছি আর দেখব না।
আমি তো আবার কারো কথা শুনি না (অনেকে বলে মায়েরা নাকি সন্তানদের সবচেয়ে ভালো চেনে, যদি সেটা সত্যি হয়ে থাকে...)

আমার জন্য থাকুক মুনলাইট সোনাটা.........
আমার মনে বাজুক মুনলাইট সোনাটা আর যে মেয়েটা পারফেক্ট মোমেন্টে সাদা চুড়ি হাতে কপালে সাদা টিপ লাগিয়ে ছাদে আঁচল উড়াতে পারে তার জন্য থাকুক স্বপ্নেরা।
আমি নাহয় খোদার কাছেই কোন এক দূর-দূরতর সময়ে একটা পারফেক্ট আওয়ার চেয়ে নিয়ে মুনলাইট সোনাটা শুনব। আকাশে বাতাসে পিয়ানো বাজবে........
যদি কখনো এই উইশটা পাই..................
হয়ত পাবো না,
আমি তো আবার বাবা মায়ের কথা শুনি না, আমার জন্য হয়ত জাহান্নাম বরাদ্দ আছে। থাকলেও একবার আল্লাহর কাছে চেয়ে দেখব, যদি সুযোগ পাই।


..............আর কেউ না বুঝলেও তিনি ঠিকই বুঝবেন..................

.................

3 comments:

What do you think?