Friday, August 19, 2011

যত সহজে তার ছিঁড়ে যায়.....

[দিনলিপি মার্কা সস্তা পোস্ট.... সারবস্তুবিহীন। সতর্কবাণী দিয়ে রাখলাম। পড়ে টাইম নষ্ট করলে আমার দোষ নাই]
........................

চিন্তা করছি রাতে ঘুমাবো। সারাদিন ঘুমালে রোজা টের পাওয়া যায় না। ভাল্লাগে না। গত রোজার মত এই রোজাতেও বাসায় অসুখ-বিসুখ লেগেই আছে, এজন্য কেমন যেন রমজানের যে শান্ত divine পরিবেশ থাকে সেটা নাই। ব্যাপারটায় মাঝে মধ্যে অসহ্য রাগ হচ্ছে। রাগের সাথে জিহাদ করতে হবে। তাছাড়া উপায় নাই।
..........................



ছোটবেলার রমজানের কথা মনে পড়ছে। সেহরীর পর আম্মু জোর করত ঘুমানোর জন্য। কিন্তু অনেকসময়ই মটকা মেরে পড়ে থাকতাম, যেই আম্মু ঘুম দিত সাথে সাথে তিন বোন আর বেড়াতে আসা কাজিনরা একসাথে খেলাধুলা শুরু করতাম। বড় আপু আর নাসরিন আপু শাড়ি পড়ত। তাদের শাড়ি পড়ায় দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়ে যেত। শাড়ি পড়তে পড়তে বেশিরভাগ দিন আর খেলাই হত না।

আরো ছোটবেলার রমজানের কথাও ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ে। ইরানে। সেখানকার মানুষ বাংলাদেশীদের মত ইফতারীতে এত আয়োজন করে না। সামান্য কিছু খাবার থাকে। হয়ত একটা শরবত, কিছু শুকনো খেজুর আর ফলমূল। পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষেরা কঠোর পরিশ্রমী হয় অথচ তাদের ফুড হ্যাবিট মোটেও বিলাসী না। কিন্তু ইরানেও... বাঙালি বলে কথা! আমাদের বাসায় আম্মু বুট রান্না করত ঠিকই। আমাদের প্রতিবেশী পিচ্চিদের সাথে করে ছোট এক পিরিচ ছোলা আর এক গ্লাস শরবত সামনে নিয়ে সাড়ে তিন বছরের আমাকে আমার মনে পড়ে। আশ্চর্য! এত ছোটবেলার কথা কী করে ব্রেনে থাকে?
আমাদের দেশের মতই ইরানী বাবা মায়েরাও ছোট বাচ্চাদেরকে রোজা রাখা থেকে বিরত রাখার জন্য নানা ট্রিক খাটায়।
ইরানীদের এই ট্রিকের নাম 'কাল্লে গোঞ্জেশকী'। শব্দ দুটোর মানে হল 'চড়ুইয়ের মাথা'। বাবা মায়েরা ছোটদেরকে বোঝান যে তোমাদের ছোটদের জন্য দিনে দু'টো রোজা বরাদ্দ। একটা সেহরী থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত আরেকটা দুপুর বারোটা থেকে ইফতার পর্যন্ত। এরকম রোজা যারা রাখত তাদেরকে নিয়ে আবার যারা আস্ত রোজা রাখত সেইসব 'অপেক্ষাকৃত বড়' বাচ্চারা হাসত। কারণ তারা অনুমতিসাপেক্ষে কয়েকদিন পর একটা দুটো করে রোজা রাখতে পারত।
তবু এই ভাঙা রোজা রেখেই যে কী আনন্দ আর গর্ব হত বলার মত না। এখন রোজা রাখতে অতটা আনন্দ হয় না..... কেন হয় না আল্লাহই জানেন।

যখন ক্লাস ফোরে উঠলাম, হঠাৎ করেই ড্রইং শেখা শুরু করলাম। বেশিদিন কন্টিনিউ করা হয়নি... ছয়মাস। কিন্তু নেশাটা মারাত্মক চেপে বসেছিল। এখনো মাঝে মধ্যে ঘাড়ে চাপে.... ঐ সময়টা রমজান মাসে ড্রইং খাতা ভরে ভরে ভাই-বোন-প্রতিবেশী বন্ধুরা মিলে পাল্লা দিয়ে ছবি আঁকতাম। স্নো হোয়াইট, সিনডারেলা, পিটার প্যানের ওয়েন্ডি আর টিংকার বেল... আর আছে কমন একটা জিনিস- গ্রামের দৃশ্য। এত আঁকার এনার্জি কোথা থেকে পেতাম জানি না। এখন বিরাট স্কেচবুক কিনে এনেছি আর দামী একবাক্স পেন্সিল রং। কিন্তু কোথায় সেই শিল্পী? তার আর দেখা পাই না। মনের খাদ্য যতদিেন জোটে, মন ততদিনে মরে যায়। মাঝে মধ্যে স্কেচবুক বের করি..... আর আঁকা হয় না, আবার রেখে দেই।
মনে হয় কী হবে ছবি এঁকে?

রমজানে গল্পের বই পড়াটাও একটা মারাত্মক নেশা ছিল। নতুন বই না পেলে পড়া বইই আবার পড়ে মুখস্থ করে ফেলতাম। এখন গল্পের বই কেনার টাকা আছে। নিজের টাকা। রিকশা ভাড়া বাঁচিয়ে, যে নির্জন রাস্তা দিয়ে আসতে আব্বু আম্মু নিষেধ করেছে সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে পয়সা বাঁচিয়ে, কিপ্টা উপাধি মেনে নিয়ে হ্যারি পটার কেনা..... এখন আর এসব কিছুই করা লাগে না। চাইলেই গিয়ে গল্পের বই কিনে আনা যায়। কিন্তু কোথায় গেছে তিন গোয়েন্দা আর কোথায় শার্লক হোমস..... নেট থেকে ফ্রি বই নামিয়ে জমা করে রাখি, সেগুলোও পড়া হয় না।

..............................................

ভাবছি ছোট ছোট আনন্দগুলো জীবনে ফেরানো যায় কিনা। সহজ কাজ না।
মোটেও সহজ কাজ না....
খোদা নিজ হাতে শৈশবে যে রঙ লাগিয়ে দিয়েছিলেন সেই রং তো আমার রঙের বাক্সে নাই।
ঘুমে-নির্ঘুমে এখন কেবল প্রার্থনা করি, আবার রাঙিয়ে দাও, হে খোদা....
আবার রাঙিয়ে দাও..................

4 comments:

What do you think?