Thursday, September 23, 2010

যাহা খাই, তাহা ভুল করে বারবার খাই! $:D

চেহারা দেখে কখনোই বেশি কিছু বোঝা যায় না। এইটা একটা আজব ফিলসফি।
দুনিয়ার কোন জিনিসটার কোয়ালিটি তার চেহারা দেখে বোঝা যায়? অবশ্য সৌন্দর্যের কোয়ালিটি বিচারের জন্য চেহারা দেখতে হয়।
ফিলসফি ঝাড়তে গিয়ে একটা কথা মনে পড়ল। আমরা তখন ইরানে থাকি। আমার মামাও ইরানে গিয়েছেন সবেমাত্র। সেখানে গিয়ে তার কোন এক ইরানী রমণীকে বড়ই মনে ধরেছিল। চিন্তা করছিলেন বিয়ে করবেন :)(পুরুষেরা কত সহজে এই ট্যাবলেটটা গিলতে চায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে চায় না, এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার!)। মামার ওখানে এক বাংলাদেশী ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছিল যে কিনা ওখানে দীর্ঘদিন ধরে আছে এবং ইরানী এক মহিলাকে বিয়ে করেছে। মামার এই ইচ্ছার কথা শুনে আম্মু আব্বু নিরুৎসাহিত করবে এই আশংকা করে মামা তার বন্ধুটাকেও সাথে নিয়ে এসেছিল। মামার প্ল্যান শোনার পর আম্মু আব্বু (যথারীতি) নিরুৎসাহিত করল। সমস্যার কথা হল, মামার বন্ধুটাও উৎসাহ দিল না। যুক্তি হিসেবে সে একটা ফার্সী উক্তি করেছিল, যেটা আমার মাঝে মাঝেই মনে পড়ে, কথাটা হল -"গোলে মাগরিবী বু-ই না দরাদ" অর্থাৎ- ''পশ্চিমা ফুলে ঘ্রাণ নাই''। কথাটার deeper meaning হল
বাইরে যারা খুব সুন্দর তাদের ভিতরকার সৌন্দর্য কম হয় (বলছি না, এটা universal truth or mathematical law যে- 'হবেই') তবে এমনটাই সচরাচর হয়ে থাকে। ইহার উৎকৃষ্ট প্রমাণ আছে হলিউডে :)। কিন্তু এসব থিওরীটিক্যাল নলেজ কোন কাজের নলেজ না, কাজের নলেজ হল এই যে, যে মানুষটার চেহারা সুন্দর, আমরা তার প্রতিই আকৃষ্ট হই। একদম প্রথমেই মুগ্ধ হই। একটা অবচেতন positive feeling প্রথমেই তৈরী হয়ে যায়। এদিক থেকে সুন্দর চেহারা একটা advantage. বড়সড় advantage. কিন্তু সুন্দর হবার অসুবিধাও কম না (হেঃ হেঃ..) সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, মানুষ আপনাকে সত্যিকার অর্থে কী মনে করে এটা সহজে জানা যায় না।
যেমন, সুন্দরীদের বিরুদ্ধে চিরন্তন অভিযোগ হল- এরা অহংকারী। কথাটা অধিকাংশের ক্ষেত্রে সত্যিও হয়। তবে সমস্যা হল, অভিযোগ করে লাভ নাই, এই অভিযোগ দুই দিকেরই দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়। সুন্দরীদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় বলেই তারা অহংকারী হয়ে যায়। এখন কথা হল গুরুত্ব কারা দেয়- আমরাই তো দেই। মুগ্ধতা তো আমরাই প্রকাশ করি। এজন্যই তারা অহংকারী হয়ে ওঠে। দোষটা দ্বিপাক্ষিক।
স্কুলে যখন পড়তাম আমাদের সাথে আমেরিকা ফেরত একটা নতুন মেয়ে এসে ভর্তি হল। অনভ্যস্ততার কারণেই কিনা জানি না, এই মেয়ে কারো সাথে তেমন কথা বলত না। চুপচাপ নিজের মতন থাকত, মানে, আসলে থাকার চেষ্টা করত। কিন্তু মৌমাছির দল আর তা দিত কই! বেচারীকে অস্থির করে ফেলত কিছু মেয়ে। তার সাথে সেধে সেধে গল্প করতে হবে, তার পছন্দ অপছন্দ জানতে হবে.... তার বন্ধু হতে হবে; কারণ একটাই - মেয়েটা মারাত্মক সুন্দরী। আমি কখনোই কারো সাথে যেচে পড়ে আলাপ করতাম না বলেই হয়তবা, কিংবা হয়ত এই মেয়ের উড়ো সঙ্গীর অভাব হত না বলেই 'নতুন মেয়ে' হওয়া সত্ত্বেও ওর সাথে আমার কখনো গল্প গুজব হয়নি। তাছাড়া আমার আর আমার বন্ধু মানে বান্ধবী-মহলের আলাদা দাপট ছিল, তার কারণ ছিল আমরা ছিলাম ক্যাপ্টেন ;) আর ছিলাম অনেক পুরনো ছাত্রী। সুতরাং যেচে একজনের সাথে আলাপ করব- তা কখনো হত না। একদিন কোন কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে দেরিতে এলাম। এমনিতে আমার জন্য সবসময়ই আমার ফ্রেন্ড সেকেন্ড বেঞ্চে জায়গা রেখে দিত, কিন্তু ঐদিন সে-ও আসেনি। সুতরাং পিছনে বসলাম। এদিকে আমাদের আমেরিকান মেয়েটাও নিয়মিত দেরি করে আসত। তার পাশে সে সরে জায়গা করে দিল, ওখানে বসলাম। এ জিনিসটা খেয়াল করে দেখবেন, কারো সম্পর্কে আগে ভাগে একটা preconceived ধারণা নিয়ে রাখলে তার সাথে আচরণও ঐ অনুযায়ী আসে। মেয়েটার পাশে বসেও আমি এজন্য সহজ হতে পারছিলাম না। যে মেয়েটার গুণগ্রাহী মেয়েরা প্রত্যেক পিরিয়ড শেষ হওয়া মাত্রই তার সাথে গল্প করার জন্য উঠে এসে তার পাশে বসে- তার সাথে সহজ হওয়াটা আমার মতন ক্লাসের বিশ্ববন্ধুর পক্ষেও কঠিন। চুপচাপ বসে আছি- যেটা ঐসময় আমার স্বভাবিরুদ্ধ ছিল, একটু পর মেয়েটাই দেখলাম খানিকটা উসখুস করে নিজে থেকেই আমার সাথে টুকটাক কথা বলা শুরু করল। বুঝলাম চাপা স্বভাবের মানুষ, তার পক্ষে এটুকুই অনেক যে সে আমার সাথে কলম-পেন্সিল কিংবা পড়া নিয়ে কথা বলছে। বোঝা যাচ্ছিল এটুকু করতেও তাকে বেশ effort দিতে হচ্ছে। আমি আমেরিকা এবং সৌন্দর্য (হতে পারে আমার মধ্যে এক চিমটি জেলাসিও কাজ করছিল তখন) এই দুটো টপিক বাদে অন্যান্য বিষয়ে টুকটাক কথা বললাম। আমি অবাক হলাম যে, এই মেয়ের সাথেই যখন মৌমাছি পার্টি গল্প করে খাতির করতে আসে তখন সে অতি গম্ভীরভাবে দু'একটা কথার উত্তর দিতে থাকে, দূর থেকেও তার শীতল আচরণ চোখে পড়ে। অথচ এখন কেমন নিজে থেকেই কথা বলছে! আমার একটু মায়াই হল মেয়েটার জন্য, যারা তার সাথে মিশতে আসে তারা সে সুন্দরী বলে মিশতে আসে, আর যাদের সাথে সে হয়ত মিশতে পারত, তারা তার আশপাশে এসব গুণগ্রাহীর দল দেখে আগে থেকেই তার ব্যাপারে বিরূপ হয়ে থাকে। এ বেচারীর বন্ধু হওয়াই তো কঠিন!
 
এখানে ছোট আরেকটা কথা বলে রাখি, সুন্দরী, সুন্দরী বার বার বলছি মানেই এই না যে কথাটা ছেলেদের ক্ষেত্রে খাটে না। যে ছেলেরা সুন্দর বলে, ভালো ছাত্র বলে কিংবা স্মার্ট বা বড়লোক বাবার সন্তান বলে মেয়েদের কাছে মূল্য বেশি পায়- তাদের অনেকক্ষেত্রে রীতিমতো heartless হতে দেখা যায়। এরা খুব সহজে মেয়েদের dump করে। অনেক সময় এত সহজে করে যে মেয়েদের feminine pride লাগে! এইসব ছেলেদেরই 'সুনাম' হয়ে যায়- অমুক ছেলেটা খুব অহংকারী কিংবা অমুক যে কত মেয়ের সাথে প্রেম করল তার ঠিক নাই.... ইত্যাদি ইত্যাদি।
হয়ত সবার কাছে সুন্দর-সুন্দরী হিসেবে গুরুত্ব পেয়ে পেয়ে এদের ব্যক্তিত্বের স্বাভাবিক বিকাশটুকু হতেও বহু সময় নেয়।
আমার কলেজের বান্ধবী হ্যাপী একদিন তার সাদামাটা looks নিয়ে আফসোস করে আমাদেরই আরেক ফ্রেন্ড সাবাহকে বলছিল, ভাই তোমরা তো সুন্দর মানুষ, এমনিতেই তোমাদের অনেক দাম, আমাদের অবস্থা তোমরা বুঝতে পারবে না। আমাদের একটা না একটা কিছু অর্জন করতে হবে। নাহলে বেইল পাব না কোথাও। দেখা যাবে HSC তে ফেল করলাম, আর বিয়েই হল না.... সারাজীবন একা থাকা লাগবে। তোমাদের অন্তত সে ভয় নাই। আমি আর হ্যাপী সম্মতিসূচক মাথা নাড়ি আর সুন্দরীরা লজ্জা পেয়ে 'না না' করতে থাকে। আমি তখন খানিকটা পচানী দেয়ার জন্যই বলে ফেললাম, তাতে কি হ্যাপী, ওদের অন্য সমস্যা আছে। আমরা নাহয় সুন্দর না বলে ছেলে -মেয়ে নির্বিশেষে কেউ পাত্তাই দিতে চায় না। তবু আমাদের একটা সুবিধা আছে। আমাদের যা-ই জুটুক, জেনুইন জুটবে। ওদের হাবিজাবি লোক জোটার সম্ভাবনা আছে। আমাদের সে ভয় নাই। আমাদের কাছে যারা আসবে তারা কেবল ভেতরটা দেখেই আসবে। ওরা তো identify ও করতে পারবে না কি দেখে একটা মানুষ ওদের প্রতি আকৃষ্ট হল, রূপ নাকি গুণ।
টিফিন টাইম শেষে ফিরছি। হঠাৎই হ্যাপী বলে উঠল , কথাটা তুমি ঠিকই বলেছ। যা-ই পাব আমাদের ভেজাল বা নকলের ভয় নাই।
  ...................................
আম্মু নানাবাড়ি থেকে ফেরার পথে পাবনার মিষ্টি নিয়ে এসেছে।
প্যারা। এই মিষ্টি জব্বর টেস্ট! :)
মিষ্টি খেয়ে পেট কামড়ানো শুরু হয়েছে, তবু ভালো লাগছে। এমনিতে মিষ্টি খেতে পারি না, কিন্তু এই একটা মিষ্টিই আমি খুব পছন্দ করি।
মিষ্টিটার একটা ছবি খুঁজলাম, পেলাম না। মিষ্টিটার চেহারা খুব বেশি সুন্দর না, অন্তত তার স্বাদের তুলনায় কিছুই না। এই জিনিসটা খেয়াল করেই এত আবজাব কচকচাইলাম :D..........এই সব ফিলসফি নিয়ে লেখার কথা মাথায় আসল ঐখান থেকেই।

সুতরাং আজকের পোস্টটা 'মিস্টার অ্যান্ড মিসেস প্যারা'কে উৎসর্গ করা হল। যাদের চেহারা তাদের স্বাদের প্রতি সুবিচার করতে পারে না:D।

13 comments:

  1. hehehe. ami shundor cheleder kach theke 100 hat dure thaki. =)

    hmm... amar mone hoy 'shundor' ta subjective. je nijeke shundor/shundori bhabe na, tar moddhe ohonkarta thakena.

    'abjab kochkochano' pore moja pelam. :)

    ReplyDelete
  2. অ্যাঁ! আমি যে তাহলে 'সুন্দর' হবার জন্য এত কষ্ট করে চিরতার তিতা পানি আর ত্রিফলার পচা পানি খাই? তারপর আবার উপটান লাগাই? তার কী হবে? প্রতিদিনকার ফেইসওয়াশেরই বা কী হবে? :((

    ReplyDelete
  3. L,
    100 hat dure na thakai valo. seshe dekhbe dure chhile dekhei jokhon kachhe jawa lagbe tokhon somossa aro beyapok hoye jabe :D
    eta obosso thik bolso,sundorta subjective, tobe jara really onek sundor hoy ederke tader ashe pasher manushera eta vabtei dite chay na j she sundor na. bar bar bole bole take bissas koray dey j she sundor, tarpor jokhon e tar ohongkar bere jay tokhon e take dosh deya shuru kore. tai na?
    moja peyechho jene khushi laglo :)

    masud,
    tumi ki sundor hobar jonno try korchho na "forsha" hobar jonno? 2 tar moddhe parthokko achhe, tai na?

    ReplyDelete
  4. ফর্সা ছেলেদেরকে মেয়েরা পছন্দ করে নারে ভাই,আমি এর জলজ্যান্ত উদাহরন।
    আলম ভাই,তুমি বহুত শান্তিতে আছ:)

    ReplyDelete
  5. ভালো কথা,সুন্দর আর ফর্সার মধ্যে আমি তেমন কোন পার্থক্য দেখি না। চেহারা কুৎসিত হলেও,সে যদি ফর্সা হয়, তাহলে তার সাত খুন মাফ। আবার চেহারা যতই সুন্দর হোক,দেখতে যদি কালো হয়,তাহলে সে সাত দুগুনে চৌদ্দ খুনর আসামি!(এটা অব্শ্য কেবল মেয়েদের বেলাতেই ঘটে)

    আমরা বাইরের রুপটাকে এতো বেশী গুরুত্ব দেই যে, "চকচক করলেই সোনা হয় না" এই প্রবাদটা প্রায়ই ভুলে যাই।

    লেখাটা সব মিলিয়ে সুন্দর।

    ReplyDelete
  6. accha tumi ki somewherein eo rohossho balika name likhsila? anyway - rohossho balikar latest golpo shundor hoise. :)

    ReplyDelete
  7. Ibn Shahid,
    welcome to my hijibiji blog... :)
    ami obosso sundor ar forshar moddhe onek parthokko dekhi, oneke forsha hoy khub, kintu sundor hoy na. asole meyeder ba chheleder je khetrei bolo na keno, forsha der ke eto kodor j kora hoy eitar ekmatro karon holo amader deshe forsha manush songkhay kom. songkhay beshi hole dekhte eitake keo ar sundor er scale bolto na. anyway, amader dekhi chhelera beshi forsha hole otota valo lage na, ektu brownish typer color valo :)) obosso tar mane ei na j forsha chheleder bail nai :D tomake udahoron hishebe dekhanor time ekhono hoy nai. aro koyekta bochhor jak tokhon dekha jabe.......
    L,
    hu, ami somewherein a likhchhilam ekta golpo... but seta niye ami khanikta pochanio kheyechhi basay, fiction keo "beshi" fictitious hote dekhle manush birokto hoy... amar golpota mone hoy shei doshe dushto chhilo.. but tomake thanks. proshongsha pele ami utshaho pai. abar lekhar ekta upolokkho kore dile tumi.. :D
    thanku!

    ReplyDelete
  8. সুতরাং আজকের পোস্টটা 'মিস্টার অ্যান্ড মিসেস প্যারা'কে উৎসর্গ করা হল। যাদের চেহারা তাদের স্বাদের প্রতি সুবিচার করতে পারে না:D


    বড়ই সত্য কথা। আজিব হলেও আরেকটা সত্য হইলো-- আমার মিষ্টির জগতে এইটারই আবেদন সর্বাধিক-- আরেকটু স্পেসিফিক্যালি বললে একমাত্র এটাই :P

    ReplyDelete
  9. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  10. mahmud faisal,
    ekkebare amar moner kothata bolechhen, amio mistir moddhe khali oitai utshaho niye khai, ar emnite misti khetei pari na... :D

    IBN SHAHID,
    GHOTONA KI VAI? TUMI KI COMMENT KORE SETAKE ABAR DELETE KORLE? অ্যা!!!! তাড়াতাড়ি কমেন্টটা রিপোস্ট কর, নাহলে সমস্যা আছে!

    ReplyDelete
  11. করব না রিপোস্ট, দেখি কি করেন ;)

    ReplyDelete
  12. comment ta google cache theke ber korar try korsilam... tobe luckily fail korsi :(

    ReplyDelete
  13. হা হা হা.... আমি তো এটা আগে খেয়াল করি নাই!
    এক কাজ করেন। ব্লগার সেটিংস থেকে কমেন্টস ট্যাবে গিয়ে কমেন্ট নোটিফিকেশন মেইলে আপনার মেইলটা দিয়ে দেন। তাহলে যে কেউ-ই কমেন্ট করুক না কেন, সাথে সাথে মেইলে চলে যাবে সেটা। তারপর সে মুছে দিলেইবা কি!

    ReplyDelete

What do you think?