ক্লাস সিক্স।
বয়স বোধহয় বারো বা তেরো।
স্কুল থেকে বাসায় ফিরিতেছিলাম। যথারীতি একটা দার্শনিক ভাবের মধ্যে আছি.........
এমন সময়......
পাশ দিয়ে একটা রিকশা গেল।
যেতেই পারে, রিকশা ইম্পর্টান্ট না, তার উপর বসা মানুষটা ইম্পর্ট্যান্ট। রিকশার উপর বসে ছিল এক ভাই (ভাই না বলে আংকেল বলা ভালো বোধহয়, কিন্তু আমার কাছে ভাই বয়সী মনে হইল).....
ভাইয়ের চেহারাটা আমার নবীন চোখে বড়ই সুন্দর লাগল। শুধু যে সুন্দর লাগল তা না। ভাইয়ের ভাবটাও ভালো লাগল খুব। ভাই লুঙ্গি পরে রিকশায় বসে আছে, তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। মাটির পৃথিবী তার নজরে নাই। এখন দেখলে বলতাম, "মিয়া আসমান দিয়া কি হুর পরী যায়?" কিন্তু তখন এত স্কেপটিক স্বভাব আছিল না। আমার কাছে ভাইকে বড় সোন্দর্য লাগল। কেবল সোন্দর্য না। ভালো লাগল....
কিন্তু ভাই আছিল রিকশার উপর, তাহার চোখ আছিল আকাশে, আর আমি যাইতেছিলাম পায়ে হাঁটিয়া....
দার্শনিক ভাবধারা নিয়া ভাই রিকশা চড়িয়া আমারে পাশ কাটায় চলিয়া গেল।
আহা রোমান্টিক শোকে শোকাহত আমি... বাসায় ঢুকিলাম....
ভাই যে লুঙ্গি পরিয়াছিল, ইহা যে আনস্মর্ট কাউন্ট করা যাইতে পারে, ভাইয়ের যে চাপা স্লাইটলি ভাঙ্গা -এইসব কিছুই মালুম হইল না আমার। মনের মইধ্যে প্রজাপতি পাংখা মেলিয়া ফর ফর করিয়া উড়িতে লাগিল.... আহা সে কী অনুভূতির বিস্তার.....
মনের মধ্যে একটি ছেলে রিকশা চড়ে দুলে দুলে যায়......
এক সপ্তাহ গেল (খালি ব্রাদারের কথা মনের মধ্যে ঘুরিতে লাগিল)
দুই সপ্তাহ গেল (ভাইয়ের চেহারার ডিটেইলস ভুলে যেতে শুরু করলাম)
তিন সপ্তাহ (ভাইয়ের কেবল ভঙ্গিটা মনের মধ্যে বাকি আছে)
..... আরো দিন যায়........
জল পড়ে,
পাতা নড়ে,
ভাইয়ের কথা-
অল্পবিস্তর
মনে পড়ে......
ইহার পর......
একদিন.............
ইস্কুল ছুটি হইতেছে। খাড়ায় আছি বান্ধবীর লগে। কখন ভাইয়া নিতে আসবে সেই অপেক্ষা। কড়া রোদ। উদাস দুপুর।
হঠাৎ দেখি সেই উদাস পোলা।
আমার দিকে হাঁইটা আসতেসে!!!!!!
আমার বান্ধবী বলিল, খোদা হাফেজ। মামা নিতে আসছে। যাই।
উদাস বালকের দেখা পাইয়া অল্পবিস্তর প্রীত হইলেও একটা অসোয়াস্তি দেখা দিল। ভাগ্যিস বান্ধবীকে বেফাঁস কিছু বলি নাই!!!
আরো বহুদিন গেল।
ভাইয়ের চার্ম তেমন নাই।
নিত্য নতুন ক্রাশের ঠেলায় ভাইয়ের কথা আর মনেই পড়ে না। পথে ঘাটে এত সুন্দর সুন্দর ইস্মাট ছেলে যে কারো কথাই বেশিদিন মনে থাকে না।
যাহোক।
স্কুলের একটা গ্রুপ ওয়ার্কের জন্য বান্ধুবীর বাসায় যাওয়া লাগল।
আমার কিন্তু ততদিনে আর ভাইয়ের কথা তেমন মনে নাই। অসোয়াস্তিও নাই।
বান্ধুবীর বাসায় গেলাম।
ড্রইংরুমে বসতে দিল।
কিন্তু আমার গায়ের মধ্যে তো স্প্রিং লাগানো, আমি উঠে এদিক সেদিক ঘোরা শুরু করলাম। বান্ধুবী ঘুমায়, তাকে ডাকতে গেলাম।
ফিরে আবার ড্রইং রুমে চা খেতে আসতেসি।
এমন সময় হঠাৎ কোত্থেকে ভাই উঠে এল (ভাই না বলে মামা বলা ভালো)......
তিনি সোফার উপর লেপ কান্থা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। গেস্ট আসছে টের পেয়ে লুঙ্গি গিঁট দিতে দিতে উঠে এলেন। বেচারী আধা ঘুমন্ত মানুষ, তাহার সামনে আমি আসিয়া দাঁড়াইয়া গেলাম।
লুঙ্গি গিট দিয়ে উনি ডানে সরে আমাকে যাওয়ার জায়গা করে দেয়, এদিকে আমিও ডানদিকে সরে উনাকে যাবার জায়গা করে দেই.....
আবার উনি বামে সরে
আমিও বামে সরি....
এবার আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম
উনিও দাঁড়ায় পড়লেন....
আবার আমি বামে.....
উনিও বামে।
শেষকালে আমি স্টিল পিকচার হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। উনি যাইতে পথ পাইলেন।
পিছন হইতে আমার বান্ধুবী হাসিতে লাগিল খ্যাক খ্যাক করিয়া। যেন এমন মজার দৃশ্য সহজে তাদের বাসায় ঘটে না।
.................
ইহা আমার প্রথম ক্রাশ।
আমার প্রথম ক্রাশ আংকেলকে সর্বশেষবার দেখার সময় চেহারা এবং ফিচারের সমস্ত দোষত্রুটিগুলোই চোখে পড়তে লাগল। মনে হইল, আমি কী দেখিয়া এত অভিভূত হইয়াছিলাম?
আসলে,
বয়সটা রঙ্গিন আছিল। এখন বুঝি। নাইলে এখন চোখের কী দোষ ঘটসে যে, ছেলে হোক, মেয়ে হোক দেখা হওয়ার পর, পরিচয়ের পরই তার খুঁটিনাটি দোষ বাইর করতে বসি?
উহু, আপনার প্রথম ক্রাশ আমি ঠিক মানতে পারলাম না।
ReplyDeleteঅন্তত আপনি যেমন মানুষ তাতে চাপা ভাঙ্গা আর লুঙ্গি পরা পাব্লিকের জন্য আপনার মনের মধ্যে রোমান্সের প্রজাপতি পাংখা মেলিয়া ফর ফর করিতে লাগিল ইহা এক কথায় অবিশ্বাস্য!! ;)
vaijan chapa vanga hoileo dekhte besh sondor achhilo. KHOMA bujhso... chehara sundor achhilo... tachhara ektu chapa bosa hoile ki lomba + dhushor forsha hoite pare na?!
ReplyDelete;)
ei khanei to secret... amar kachhe (sei somoy) miare dekhte valoi lagsilo... tachhara bedare dekhle bujhta, smart achhe... bollam na ...VAAB.. vaab thakle ar chai ki! khek khek
হু! এইটাই তো সমস্যা। ভাব দেখেই দিওয়ানা হয়ে গেলে তো প্রব্লেম। ;)
ReplyDeleteলুঙ্গি পরা 'মিয়া'দের আপনি স্মার্ট কনসিডার করেন নাকি?? ;))
আমি কিন্তু এখনও মানতে পারলাম না ;)
na parle na paro... vaab ta smart achhilo. tachhara eta k bollo j sob somoy oi lok lungi e pore thakto? ami to here 3rd ... 4th etc times dekhsi, tokhon to lungi pora achhilo na... he he
ReplyDeleteseita arek dhoroner secret... but no more... ar bolbo na... ha ha.
আঙ্কেলের একটা ছবি পোস্টের সাথে দিলে ভাল হত।
ReplyDeleteআপনার ফ্রেণ্ডকে পোস্টটা পড়তে(!!) দিয়ে একটা ছবি যোগাড় করিবেন। তাহা হইলে পোস্টটি সম্পূর্ণ হইবেক। :)
zeenat, আমার বান্ধবীকে এই পোস্ট পড়তে দিলেও মনে হয় না সে বুঝতে পারবে। আমার ধারণা ঘটনা তার মনে নাই। না থাকাই অবশ্য ভালো। তবে আংকেলের ছবি কোনমতেই দেয়া যাবে না। দিলে আমার পরিচিতজনেরা চিনে ফেলতে পারে।
ReplyDelete