কথা ঠিক, মানুষের স্নায়ু মাথায় খবর পৌঁছাতেও কিছুটা সময় নেয়। সেই সমটুকুর মধ্যেই আমি সাবানের গন্ধযুক্ত বিস্কুটকে আমার মুখের ভিতর প্রসেসড করে নিয়েছি। ফল স্বরূপ বাকিটুকু গেল ওয়েস্ট বাস্কেটে। কিন্তু যেটুকু আমার মুখে রইল সেটা আমাকে একটা সবুজ সবুজ ফিলিংস দিতে লাগল।:|:|
তাড়াতাড়ি পানি খেতে উঠে গেলাম। ডাইনিংয়ে গিয়ে দেখি আমার ব্যক্তিগত মগ টেবিলে নাই। কারণ আমি বোহেমিয়ান স্টাইলে চা খেয়ে সেটি ড্রইংরুমে রেখে এসেছি। আমার মুখের ভিতর দিয়ে সবুজ সাবানের গন্ধ আমার পেট পর্যন্ত চলাফেরা শুরু করল (এটার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন সবুজ কালারের সাবান দেয়া হয়েছে যার গন্ধ আমার মস্তিষ্ক রং-সহ সেভ করে রেখেছে, কিন্তু যথারীতি.... সাবানটার নামটা ভুলে গিয়েছে)।
অবশেষে নিজের মগ ধোয়ার হাত থেকে বাঁচতে আমি আমার ছোট বোনের বিরাটাকার মাটির মগ টেবিল থেকে উঠিয়ে নিলাম এবং সেখানে পানি ঢেলে এক নিঃশ্বাসে খাওয়া শুরু করলাম। সাবান-বিস্কুট আমার গলা বেয়ে পেটে নেমে যেতে লাগল......./#)/#)/#)
ইন দ্য মিন টাইম টের পেলাম আমার ত্যাড়া ব্যাকা দাঁতের ফাঁকে সাবান -বিস্কুট জায়গা করে নিয়েছে।
ছোটবোনের বাটি টাইপের ক্ল্যাসিক মাটির মগের তলায়ও যে এত পানি ধরতে পারে তা কে জানত?
তাছাড়া সময়মত পানি না খেয়ে তৃষ্ণা জমানোর ফলে দম আটকে মরে যাবার যোগাড় হওয়া পর্যন্ত পানি খেয়েই গেলাম।
গলায় পানি ঠেকতে ঠেকতে ঠেকল না। এখন সেইভাবেই বসে রয়েছি, মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত আমি যা করতে চাচ্ছি না তা করেই সাবান-বিস্কুট খাবার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
ভয়ংকর প্রায়শ্চিত্ত, দাঁত মাজতেই হবে। X#(X#(X#(
এ থেকে আবার মনে করে নেবেন না যে, আমি দাঁত না মাজা 'ডার্টি মনস্টার' (যদিও কথাটা সত্যি:|)....
আসলে দাঁত মাজার উদ্দেশ্য আমার কাছে যতটা না দাঁতের যত্ন নেয়া, তার চেয়ে বেশি নিজের মুখের গন্ধ অন্যের নাকে না পৌঁছানো। এতে অন্যদের অধিকার রক্ষা হয়। আমি আবার অপরের সুবিধা অসুবিধার ব্যাপারে খুবই যত্নশীল:)...
এজন্যই ভার্সিটিতে ক্লাস নাই এবং আমিও দাঁত মাজি নাই।
ছুটির দিনে একটু শান্তিতে 'মুখ যথাসম্ভব বন্ধ রেখে এবং অন্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে' বই পড়ছিলাম। সব নষ্ট করল সাবান-বিস্কুট। মনে হচ্ছে এই ছুটির দিনেও আমাকে 'সকাল-সকাল' দাঁত মাজতে হবে, রাতে না।X(
........................
কিছু কাজ আছে মানুষ জানে যে করতে গেলেই ডিজাস্টার হবে, তাও করে। মনে মনে ভাবে- ''এইবার হবে না''। আমিও এরকম মাঝে মাঝে যা কখনো করবো না বলে ঠিক করে রেখেছি তাই করি। আজ যেমন বিস্কুট খেতে গিয়েছি। আমি জানি বিস্কুট জিনিসটা আমার জন্য না। আমি খাইও না, পছন্দও করি না। কখনো 'সম্ভবত' করবোও না। কিন্তু এই 'সম্ভবত' টার্মটাই হল আসল ভাইরাস। আমি মনে মনে বিশ্বাস করে রেখেছি, কোন এক সময় তো হতেও পারে যে আমার কাছে কোন স্পেসিফিক টাইপের বিস্কুট ভালো লেগে গেল.... যদিও আসলে কখনোই লাগবে না।
তবু এই 'এনিথিং ইজ পসিবল' টাইপ নীতির কারণে আমি মাঝে মাঝে বিস্কুট ট্রাই করি। কিংবা কেউ এমন করে সাধে যে খেতে খুব 'tempted' হলাম।
ব্যাস, এরপরই অনুতাপ।:|
মুখে সাবান বিস্কুটের গন্ধ নিয়ে টাইপ করতে করতে ভাবছি এরকম আরো কিছু কাজ আছে যেটা 'জানি পারব না, তাও করি'। যেমন ওয়াটার কালারে ছবি আঁকা। বহুবার নিজের কাছেই প্রমাণ হয়ে গেছে এটা আমার কম্ম না। তাও করি। এতে নতুন করে প্রমাণ হয় 'আসলেও ওয়াটার কালার আমার জন্য না'। তাও আমি মাঝে মধ্যে কী মনে করে যেন ট্রাই করি.... তারপর মাথা গরম করে উঠি এবং নতুন করে শপথ করি- 'আর জীবনেও ওয়াটার কালার না।' X#(X#(
..................................
একটু আগে বড়আপু সিনেমা আপডেট দিয়ে গেল। পাশের টিনের বস্তিতে বাংলা সিনেমা চলছে। নায়িকা নায়ককে ভয় দেখায় যে তাকে ভালো না বাসলে সে 'পটাসিয়াম কার্বনেট' খাবে। নায়ক তাতে নির্দয় হাসি হেসে বলে, 'হ্যা দেখা যাবে বোতলে করে কোক খাবে'।B-)
কী ভয়াবহ নিষ্ঠুর!
কিন্তু আমার জানামতে স্মার্টেস্ট স্পিকিং বাংলা-ছবির-নায়ক যার কিনা সেন্স অব হিউমার আছে;)।
যাহোক, পরের দিন নায়ক এবং তার বন্ধু গল্প করতে থাকে। তখন টিচার এসে বলে,'তোমরা কী করছ? রুমানা কোথায়? সকাল থেকে ল্যাবে পটাসিয়াম কার্বোনেটের শিশিটা পাওয়া যাচ্ছে না।'
তখনই ঢু- ঢু- ঢু বাজনা বেজে ওঠে।এই বাজনার অর্থ 'আসন্ন বিপদ'। তখন নিশ্চয়ই নায়কের হৃদয়ে বান ডেকে গেছে, তার সেন্স অব হিউমার লস্ট হয়ে গেছে। কিন্তু আমি সেগুলো দেখতে পেলাম না।
আর তাছাড়া আমার পেটের মধ্যে এখন ঢু- ঢু-ঢু করতেসে... খাইতে যামু। কিন্তু তার আগে মুখ থেকে সাবানের গন্ধটা রিমুভ করা দরকার। মুখ খুললেই সাবানী- স্মৃতি ব্রেনে ফিরে আসে..........
ভয়াবহ!
..............................
[বিশেষ বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখার সাথে কয়েকটা বিদঘুটে ছবি জুড়ে দেয়া হল। ভাষা শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে ছবিগুলো এত ইয়ে টাইপ হবে তা আমি ভাবতে পারি নাই। সুতরাং, 'ছবি ভালো হয় নাই'- না বললেও চলবে। :( আসলে Allie Brosh এর অনুসরণে পোস্টের সাথে কার্টুন দিতে গিয়ে এই অবস্থা।
আরেকটা অগুরুত্বপূর্ণ কথা, এই পোস্ট গত শুক্রবারের আগের শুক্রবার লেখা। পোস্ট দিতে সামান্য দেরি হয়ে গেল আর কি!]
গোপন গোপন আমার মগ ব্যবহার!!!
ReplyDeleteলেখিকা যে অন্যের সুবিধা অসুবিধার ব্যাপারে কতটা যত্নশীল সেটা নিয়ে পোস্ট দেয়া হবে।
শেষের চিতপাৎ ছবিটা খুব ভাল হয়েছে।
kco3 (potassium carbonate khabo)
chobigula shundor hoise!! tomar lekha great (kichu-na niyei birat lekha likhe felo hehe) ar chobio great! xD
ReplyDeletezeenat - potassium carbonate hocche K2CO3. (2ta missing chilo. :P)
ওরে বাবা, দুই কেমিস্ট তো আমারে বিপদে ফেলে দেবে দেখতেসি! কেমিস্ট্রি সম্পূর্ণ ভুলে খাইসি.........
ReplyDeleteযীনাত, এক সময় গর্ব করে মানুষের কাছে বলতে পারবে যে আমার বোন একবার আমার মগে করে পানি খেয়েছিল। বুঝতে পারছ তো যে একসময় আমি ব্লগিং করেই ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলব?
L,থ্যাংকু। লেখা গ্রেট বলার জন্যও আর ছবির প্রশংসা করার জন্যও।
খুবই মজার লেখা। পড়ে দন্ত বিকশিত হাসি দিলাম :D
ReplyDeleteছবিগুলো অনেক সুন্দর হইসে। alie brosh এর নাম শুনি নাই। তবে উনি তা বলে থাকলে খুব ভালা বলসেন। কারণ, আপনার ছবির কারণে মজার লেখাটা আরো মজাদার হইসে। আমিও সাবান বিস্কুট একদম খাইতে পারিনা। বিষম যন্ত্রণাদায়ক
যত যা-ই হোক, রেইচি বিস্কুট আর মেরি গোল্ড- এই দুইটা খুবই ভালো ! ;)
ReplyDeleteআপনার লেখার আর কী মন্তব্য করবো। জটিল লিখেছেন। ভালো কথা, আমিও বিস্কুট খাইনা। বিচিত্র গন্ধ পাই খাইলে। তেলাপোকার গন্ধ। আবার মাইন্ড কইরেননা। তবে কিছু কিছু বিস্কুট আছে আসলেও মজা লাগে খাইতে। আপনাকে খাওয়াব একদিন।
ReplyDeleteস্বপ্নচারী,
ReplyDeleteধন্যবাদ। ভালো তো বলসেন বটেই। উনি নিজেও কার্টুন আঁকেন। আপনাকে হাসাতে পেরে আমিও খুশি।
মাসুদ, রেইচি থেকে হুইল পাউডারের গন্ধ আসে।
শারমীন, এই তো দিলে মেরে! এটাই তো সমস্যা, অন্যরা সাধে আর আমি খাই!
রেইচিতে আমিও হুইল পাউডারের গন্ধ পাইসি! কী তামশা!! :P
ReplyDeleteshopnochari,
ReplyDeleteটের পাইসেন জেনে নিজের ঘ্রাণশক্তির উপর আস্থা বাড়ল। কেউ কেউ অবশ্য এই বিস্কুট পছন্দ করে। কীভাবে পছন্দ করে এটা আমার অবাক লাগে।
রেইচি খেতে বসলে কীভাবে হুইলের(সু)গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে,খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই? এই বিস্কুট একটা wander. কেউ মোটেই গন্ধ টের পায় না, কারো গন্ধে দম আটকে যায়।
wonder* হবে। সরি। :(
ReplyDeleteপ্রস্তুতকারকরা ব্যাপক প্রতিভাবান! এই (সু)গন্ধের ভয়ে আমি আর প্যাকেটটা ধরি না :)
ReplyDeleteঅফটপিকঃ ডানের ভোটাভুটিতে তো ইচ্ছামতন ভোট দেয়া যায়। যতবারই আসি, বিভিন্ন অপশনে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছি। হিহিহি
Shopnochari,
ReplyDeleteooooh........ এই অকাম! আপনি ভোট দিতেসেন? আর আমি ভাবছি কে অচেনা... অজানালোক থেকে ভোট দিয়ে যায়?
আহ অজানার রহস্যটা নষ্ট করলেন ক্যান। না বললেই ভালো ছিল।
:(