Friday, March 2, 2012

খুচরো আনন্দ

কতগুলো দারুণ মজাদার কিন্তু অর্থহীন কাজ আছে যেগুলো বেশিরভাগ ছোটবেলায় করতাম। এইগুলো হল খুচরো আনন্দের কাজ। বড় মানুষের জন্য মোটামুটি এগুলো সবগুলোই পাগলামীর পর্যায়ে পড়ে.. তবে আনন্দ তো আনন্দই।

১.ট্যালকাম পাউডার ম্যানিয়া:

ট্যালকাম পাউডার ফ্লোরে ছিটিয়ে তাতে অন্তত একবার পিছলা খায়নি এরকম বাচ্চা মনে হয় পাওয়া কঠিন। আমার মনে পড়ে আমরা ভাইবোনেরা ফ্লোরে পাউডার ছিটিয়ে মোজা পরে 'পিছলা-পিছলি' খেলতাম।

যেকোনো পারফিউমড জিনিসই হল স্বপ্নময়..dreamy....আহ....সুঘ্রাণ.... উমম... (আল্লাহই জানে যারা পড়তেসে তারা কী ভাবতেসে আমার মস্তিষ্কের স্বাস্থ সম্পর্কে:-|)। তার মধ্যে আবার ট্যালকাম পাউডার একটু বেশি ভালো লাগে। এজন্য হয়ত পিছলা-পিছলা খেলাটা আমার এখনো খেলতে ভালো লাগে।
মাঝে মইধ্যে গোফনে গোফনে খেলাই... কেডাউ জানে না যাতে... সেইরকম সাবধানে.... :D

ভারী শরীরের মানুষদের জন্য বিপদজনক খেলা :D তবে হালকা পাতলা আছাড়কে খুব বেশি ভয় না পেলে খেলতে পারেন। সাথে দুই চারটা পিচ্চি-পাচ্চা জোগাড় করে নেবেন। ওরা না থাকলে এই খেলার আসল মজাই টের পাবেন না।
এখন তো ছোটবেলার মত আনকাউন্টেবল আছাড় খেয়েও উঠে দাঁড়িয়ে হি হি হা হা করার মত শারীরিক-মানসিক ফ্লেক্সিবিলিটি নাই, সুতরাং ওদের মজা দেখাটাই আসল মজা।
ওহ, মনে পড়ল ক্যারম বোর্ডে ট্যালকাম পাউডার দিয়ে খেললে গুটি খুব তাড়াতাড়ি দৌড়ায়।

[পাউডারের উপর পিছলা খাওয়ার ছবি গুগল সার্চে পাওয়া গেল না। :( অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাকেই অস্ত্র (ক্যামেরা) হাতে তুলে নিতে হবে! ]


২.ওয়াটার বল:

শাওয়ার নিতে দাঁড়িয়ে আঁজলা ভরা পানি দিয়ে উপরে ছুঁড়ে দিয়ে আলোর উল্টো দিক থেকে তাকিয়ে দেখবেন কেমন মারাত্মক সুন্দর দেখায়। খুব অল্প একটা সময়ের জন্য বাতাসের মধ্যে পানির ছোট বড় বল তৈরি হয়। আর তার মধ্যে দিয়ে আলোর বিচ্ছুরণ হয়। জোস একটা জিনিস। আমি ছোট থাকতে এই খেলাটা গোসল করতে ঢুকলেই খেলতাম। সেদিন খুব মানসিক ক্লান্তি নিয়ে শাওয়ার নিতে ঢুকে হঠাৎ করেই এই খেলাটার কথা মনে পড়ে গেল। একটুখানি পানি হাতে নিয়ে সত্যি সত্যি বাতাসে ছুঁড়ে দিলাম। বাল্বের আলো পানির ছোট ছোট বলের মধ্যে দিয়ে অদ্ভূত সুন্দর লাগল দেখতে। মনটা আচমকা ভালো হয়ে গেল।
ছোট ছোট পার্ল শেপের পানি... মুহূর্তের মধ্যে ফ্লোরে পড়ে ফেটে যাচ্ছে। একটু পর আপনমনে হাসি পেয়ে গেল। এই খেলা খেলতে খেলতে একবার বাল্বে পানি লেগে ঠাস করে ফেটে গিয়ে আমার পিলে চমকে দিয়েছিল..... সেই থেকে খেলার ইতি।

আরো মনে পড়ল, আমি যতই এই পানির বল দেখতাম, ততই ভাবতাম এগুলো দেখতে হীরার গোল গোল টুকরোর মত। যদিও আমি কখনোই অত বড় ডায়মন্ড চোখে দেখিনি, আর তখন তো ডায়মন্ডের ছবিও দেখিনি। তখন ডায়মন্ড দেখেছি বলতে আম্মুর হাতের আংটিতে ছোট ছোট করে বসানো ডায়মন্ড....

কল্পনা করতে দোষ এখন দেখতে পাই, কিন্তু তখন পেতাম না।

..........................
[এই জিনিসটার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত ছবি পেলাম না। যা পেলাম দিলাম। সহজ বিউটি কী মানুষ ক্যামেরায় ধরতে পারে না? ফোটোগ্রাফাররা করে কী! :( ]

৩. উড়ন্ত কাগজ কুচি:

আমার ছোটবেলার একটা ঘটনা জড়িত আছে এই খেলাটার সাথে।
তখন আমি ক্লাস টু-তে। অফ টাইমে ক্লাসে বসে রঙিন পেন্সিল দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে একটা কাগজের দুই পিঠে বিভিন্ন রং করলাম। উদ্দেশ্য- বান্ধবীকে 'একটা মজার জিনিস'দেখানো। ছোট হাত দিয়ে তো আর খুব স্পিডে রং করা যায় না, সুতরাং রং করতে করতে স্যার ক্লাসে চলে এলেন। সোবহান স্যার। এমনিতে স্যার মজার মানুষ, বাচ্চাদের সাথেও ভালোই মানিয়ে নিতে পারতেন। তবে সেদিন খুব একটা 'ভালো মানিয়ে নেয়ার' পরিচয় পাওয়া গেল না। কেবল যখন আমি আমার মাল্টি কালার কাগজটা কুচি করা শেষ করেছি যে সেটা বাতাসে উড়িয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেব, তখনই স্যার আমাকে তাক লাগিয়ে দিলেন। হঠাৎ এগিয়ে এসে জানতে চাইলেন আমরা কী করছি। যেই দেখলেন কাগজ কুচির একটা ছোটখাট টিলা আমার খাতার উপর আর আশপাশের চারপাঁচজন খুব উৎসাহে সেদিকে তাকিয়ে আছে মজা দেখার জন্য, স্যার বললেন, 'এটা কী করছ?' আমি স্যারকে ব্যাখ্যা করে বলতে যাচ্ছিলাম যে এটা বাতাসে উড়ালে দেখতে অসংখ্য উড়ন্ত প্রজাপতির মত লাগে দেখতে.... কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে স্যার খটমটে গলায় বললেন,'জানালা দিয়ে এখখনি এগুলো বাইরে ফেলে দাও।' :((

তখন পর্যন্ত আমার জীবনে নিজ হাতে এত কষ্টের কাজ আর কখনো করতে হয়নি :(।
আর কেউ হইলে ওই সময় কাইন্দা দিত.... কিন্তু আমি দিলাম না।
এখনও মনে পড়ে কত কষ্ট হয়েছিল কাগজগুলো জানালা দিয়ে ফেলে দেবার সময়.... তাকিয়ে দেখলাম কাগজের কুচিগুলো ভেসে ভেসে নামছে। দেখতেও সুন্দর লাগছে..... কিন্তু যত সুন্দর লাগার কথা তত সুন্দর লাগল না।

কারণ আমি ওগুলো উড়াচ্ছিলাম না, ফেলে দিচ্ছিলাম। :(

এভাবে কাগজ কুচি মাথার উপর উড়িয়ে নববিবাহিতদের বরণ কর ইরানীরা। বাচ্চাকালে তাই কারো মাথার উপর ছেড়া কাগজ উড়িয়ে দিয়ে তাকে সবাই বর কিংবা বউ বলে বলে তাকে খ্যাপাতো।
ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে জানলাম কেবল ইরানে না, অনেক পশ্চিমা দেশেই এভাবে বর-বধুকে বরণ করাটা ট্র্যাডিশন। এর কোন বাংলা নাম আমার জানামতে নাই। ইংলিশ নাম Confetti, এটা একটা ইটালিয়ান শব্দ।
ব্যাস,এই বিষয়ক জ্ঞান আমার এতটুকুই :-।

. রঙিন বুদবুদ:

এটা খুবই পরিচিত খেলা। বাচ্চা-বুড়ো সবাই কমবেশি জীবনে একবার হলেও খেলেছে। সাবান গোলা পানি কিংবা লিকুইড ডিশ-ওয়াশার একটা বাটিতে নিয়ে তাতে স্ট্র ডুবিয়ে ফু-উউউ.... ব্যাস... বাটি উপচে পড়ে  রঙিন বুদবুদে :D।
দারুণ মজার জিনিস! একটা ক্ষুদ্র তথ্য হল, সাবানের গোলার মধ্যে অল্প একটু চিনি মিশিয়ে নিলে বিশাল বড় বড় বুদবুদ বানানো যায়.... সত্যি সত্যিই বিশাল!
গোসল করতে গিয়ে সাবানের ফেনা দিয়ে তর্জনী আর বুড়ো আঙ্গুলের মধ্যে ফু দিয়ে বেলুন বানানোও একই রকম মজা।

এই খেলা নিয়েও একটা ছোটখাট স্মৃতি আছে আমার। আমরা পিচ্চি-পাচ্চিরা সবাই শিসবিহীন কলমকে পাইপ হিসেবে ব্যবহার করে বাটি ভরা ডিশ-ওয়াশার দিয়ে বুদবুদ বানানোর খেলা খেলছিলাম। এক নি:শ্বাসে কে বাটিতে কতখানি উঁচু করে বুদবুদ বানাতে পারে তারই প্রতিযোগিতা হচ্ছিল। বড় আপু বিশাল এক দম নিয়ে ফু দিয়ে চলেছে তো দিয়েই চলেছে...... তার দম ফুরিয়ে আসছে.... তবু সে থামছে না, আমরা বাচ্চারাও জড়ো হয়ে দেখছি কতদূর সে যেতে পারে....
হঠাৎ...  দম ফুরালো তো ফুরালোই; বড় আপু কলমের মধ্য দিয়েই দম টেনে নিল! তার দম ফুরিয়ে গিয়েছিল। আর সত্যি বলতে কি... হিম্মতের ডিসপ্লেটা একটু বেশিদূরই করে ফেলেছিল বেচারী! তার ইতি ঘটল সাবান গোলা খেয়ে ফেলে....

পরিণতিতে আম্মু আমাদের সবার এই খেলা খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দিল। :-।



[দুইটা ছবিই খুব ভালো লাগল , দিয়ে দিলাম।]


৫. পাঁপড়ি দিয়ে সাজগোজ:

ফুলের পাঁপড়ি গোল করে কেটে টিপ বানিয়ে থুতু দিয়ে কপালে বসানোটা একটা শৈল্পিক ধরণের কাজ।
কিন্তু এজন্য যে কত ফুল বাধ্য হয়ে অকালে ইন্তেকাল করেছিল তার হিসাব নাই। অবশ্য সঠিক টেকনিক জানা ছিল না বলেই আমি হাতে বহু কষ্টে ছিঁড়ে গোল শেপ বানানোর চেষ্টা করতাম, যেটা অবশ্যই পারফেক্ট বৃত্তের ধারেকাছেও যেত না। এমনকি 'delusional বৃত্ত' বানাতেও অনেক সময় চার-পাঁচটা ফুলকে মৃত্যুবরণ করাতে হত। :( বেচারীরা!

পরে অবশ্য সহজ পদ্ধতি শিখেছিলাম একটা। সেটা হল কলমের ক্যাপের গোল মাথা দিয়ে চাপ দিয়ে একটা বৃত্ত কেটে নেয়া।
চোখা চোখা ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে বড় বড় সাদা নখ বানানোটাও দারুণ ছিল। ফুলটার নাম আমার জানা নাই, থাকলে বলা যেত। ঘটনা হল পানি কিংবা থুতু দিয়ে পাঁচটা নখ আটকানো বেশ কঠিন কাজ ছিল। সবগুলো আটকানো হতে না হতে একটা দু'টোর পানি শুকিয়ে নখ খসে পড়ত :(। মহা জ্বালা! শেষমেষ আমি নানাজীর চিঠির খাম আটকানোর গ্লু দিয়ে নখে পাঁপড়ি আটকে নিয়েছিলাম। খুব যে ভালো কাজ দেয় তা না, তবে পানি কিংবা থুতুর চেয়ে বেটার অ্যাডহেসিভ)। এই নখ লাগানোর পর নিজেকে মনে হয় মডেল মৌ।


সন্ধ্যামালতী ফুল ডলে হাত পায়ে আলতা দেয়াটা তো পুরনো ব্যাপার... ফুলটার মেজেন্টা কালার হাতের তালুতে দেখতে খুব সুন্দর লাগে... মানে লাগত। সর্বশেষ কবে সন্ধ্যামালতী দেখেছি মনে পড়ে না।

বহুত কষ্ট সাদা ফুলটার ছবি বের করলাম নেট থেকে। আর সন্ধ্যা মালতীও। ফুল দেখেন।



৬.নারকেল পাতার চশমা:


আহা... এইটা একটা মারাত্মক জিনিস। আমার মনে হয় অনেকেই পারে বানাতে। প্রথমবার নারকেল পাতার হাত ঘড়ি দেখে যে মুগ্ধতা কাজ করেছিল সেটা একটা wonder.
এখন আর কোনকিছুতে এত মুগ্ধ হতে পারি না।
হতে পারি না কেন তা কে জানে!


[ছবিটা একটু এডিট করে নিলাম। ফোটোগ্রাফার আশা করা যায় মাইন্ড খাবে না।]




৭.পানিতে রোদের নাচ :


এই জিনিসটা যে দেখে নাই সে হয় অভাগা নাহয় geek. একটা ছবি দেখলাম গুগল ইমেজ সার্চ এ। একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে পানিতে রোদের নাচ দেখছে। এই জিনিসটার দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকা যায়। সহজ কাজ। ক্রিসেন্ট লেকের পানিতে এরকম টুকরো টুকরো রোদ খেলে বেড়াতে দেখে কবি কবি দুপুর পার হত ছোটবেলায়.... সেই ফ্যান্টাস্টিক সময়কে স্মরণ করে আজকের লেখার ইতি.... :D

[এই মেয়েটা আমি। তবে ফিজিক্যালি আমি না।]

.......................................
[এটা একটা হিজিবিজি শ্রেণীর লেখা হয়েছে। যদিও লেখাটা লিখতে প্রচুউউর সময় ব্যয় হল, মনে হয় না সেই তুলনায় বস্তু খুব একটা পদের হয়েছে :(। নেভার মাইন্ড! যদি শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আপনাকে অভিনন্দন! আপনার মিয়া অনেক ধৈর্য। আর....
জানেন তো, বেশি ধৈর্য ভালো না।:D
]

14 comments:

  1. আহা !
    স্মৃতি / তুমি বেদনার কাছাকাছি চিরদিন
    :(
    বহুত স্মৃতি... বহুত কথা... স্মৃতি, স্মৃতি টেনে আনে...

    ReplyDelete
    Replies
    1. হুমম...
      কথা ঠিক। অনেক আগেকার কথা এইসব.. কই গেছে সেইসব আনন্দ :(

      Delete
  2. WOwow !!!!
    Nice Felling ,
    Keep it Up ...

    ReplyDelete
  3. good writing... স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। শুরুর দিকটা একটু বোরিং ছিল... কিন্তু ধীরে ধীরে অ্যাডহেসিভ হয়ে উঠল! ভাল লেগেছে!

    ReplyDelete
  4. valo laglo...asholei valo laglo...
    thanx for the nice post :)

    ReplyDelete
  5. শেষ ছবিটা দেখে আরেকটা ব্যাপার মনে পড়ে গেল। পুকুর বা জলাশয়ের মাঝে চ্যাপ্টা ঢিল ছুঁড়ে জলের ওপর সেটাকে ড্রপ খাওয়ানো। ব্যাং-নাচ জাতিয় কিছু একটা বলত, মনে নেই। ওটাও বেশ একটা মজার জিনিষ ছিল।

    বেশ লাগল লেখাটা পড়ে।

    ReplyDelete
  6. Soumyo,

    welcome to my blog :)
    আমি কখনো ওইভাবে পাথর ড্রপ খাওয়াতে পারি নাই... তবে অনেকে পারত।

    ধন্যবাদ পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য।

    ReplyDelete
  7. ধন্যবাদের কি আছে। আমি আপনার আগের লেখা গুলিও পড়েছি। তবে blogosphere-এ personal post এর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারনে মন্তব্য করিনা খুব একটা।

    Anyways, welcome. :)

    ReplyDelete
  8. personal post... hmm... আমি অবশ্য আগে কখনো ভাবিনি আমার লেখাগুলো personal পর্যায়ে পড়ে কিনা... এবার ভাবব।

    ReplyDelete
  9. 1 number mone hoy kokhono korinai.. ar 6 number familiar lagtese kintu ami kokhono korsi kina mone nai. ar onnogula to definitely korechi! just paprir jinishta chara baki gula ekhono kori... i think ami tahole 50% pagol. :/

    ReplyDelete
  10. pagol hobe keno? tahole to ami 100% pagol hoye jai.. na.. tar cheyeo beshi :|
    amio er onekgulo ekhono kori;) gopone...

    ReplyDelete

What do you think?